২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দ
১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

নমো বুদ্ধায়

কার্যক্রম

প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন

অনেকের মনের মধ্যে এই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়-দায়িত্ব রাস্ট্রযন্ত্রের উপর ন্যস্ত আছে। বিশেষ করে, আইন-শৃংখলা বাহিনী গুলো সেই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সুরক্ষা পরিষদের কি কাজ! এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে চাই, নাগরিকের যান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়-দায়িত্ব আইন-শৃংখলা বাহিনীগুলোর উপর ন্যস্ত হলেও অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ এবং সময় মতো যোগাযোগের অভাবে সেবা প্রদানকারী রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সেবাগ্রহণকারী নাগরিকদের মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা কাজ করে। বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং দুর্বল শ্রেণীর মানুষেরা এর মূল ভুক্তভুগী। অথচ একটা সমাজের সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ দুর্বল শ্রেণীর হয়ে থাকেন। বৌদ্ধ সমাজের কাছে সমাজের কেউ কেউ সবল শ্রেণীর হয়ে থাকলেও মূলত তারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে কিছুই নয়। এমতাবস্থায় এবং সমাজের কারো এই অসহায় পরিস্থিতিতে সুরক্ষা পরিষদ বিনাশর্তে, বিনাস্বার্থে উভয়ের (রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সেবাগ্রহিতা ) মধ্যে সেতুবন্ধনের মতো ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেকারণেই উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ প্রদান (এসপি) মহোদয়গনের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রক্ষা এবং সমন্বয় সাধন করে থাকি। এছাড়াও, সামরিক বাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমরা সমন্বয় সাধন করে সমাজ এবং সমাজের ভুক্তভুগীদের দ্রুত সেবা দেয়ার কাজ করে থাকি।

সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

সমাজ বলতে আমরা বিশেষ করে বৌদ্ধ সমাজের কথাই বলছি। পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ এবং বিশৃংখলার কারণে তো সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েই থাকে। তদুপরি, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ জনিত কারণেও বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ সমাজ বিভিন্ন ধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। এছাড়াও, বৌদ্ধদের বিহার, অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা, ভূমি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমিজমা এবং নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে এবং ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠান গুলো নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে আমরা রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। সমাজে দুর্বল শ্রেণীর ভিকটিম যারা আছেন তাদেরকে প্রয়োজন অনুসারে আমরা আইনী সহায়তাও দিয়ে থাকি। ধর্মীয় গুজব, উসকানি এবং বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশে সময়ে সময়ে অশান্তি সৃষ্টির যে অপচেষ্টা চলে সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি এবং নজরদারী জারি রাখি এবং বৌদ্ধ বিহার এবং পল্লী সমূহে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি।  

সভা ও সম্প্রীতি সমাবেশ

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বহু ভাষা, ধর্ম, সম্প্রদায়, সংস্কৃতির বৈচিত্রতায় পূর্ণ আমাদের এদেশ। আমাদের সংবিধানও পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার কথা বলে। কিন্তু এটাও সত্য যে, দেশীয়, ভৌগলিক এবং বৈশ্বয়িক অসুস্থ্ রাজনীতির শিকার হয়ে অনেক সময় দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। এছাড়াও, দেশে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ, চিন্তা-চেতনা এবং এক শ্রেণীর ধর্মান্ধ মানুষের কারণেও সামাজিক এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। সমাজে উগ্রবাদ, সহিংসতা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, গুজব, অপপ্রচার বেড়েই চলেছে। ফলশ্রুতিতে সমাজে মানুষদের মাঝে পরমত সহিষ্ণুতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের জন্য এটা মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। এসব সামাজিক ব্যাধি দূর করতে হলে সমাজে মানুষদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সকল ধর্মমতের মানুষ, মতাদর্শের মানুষদের নিয়ে সার্বজনীন সম্প্রীতি সভা, সেমিনার, সমাবেশ, সংলাপ টনিক হিসেবে কাজ করে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, পরমত সহিষ্ণুতা বৃদ্ধিতে আমরা প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকি।  

ধর্মীয় মেধাবৃত্তি প্রদান

বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের অনন্য আরো একটি উদ্যোগ হলো ধর্মীয় মেধাবৃত্তি কর্মসূচী। আমরা ২০২০ সাল থেকে এই ধর্মীয় মেধাবৃত্তি কর্মসূচী চালু করি। এই ধর্মীয় মেধাবৃত্তি প্রকল্পের অধীনে প্রতি বছর আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উক্ত ধর্মীয় মেধাবৃত্তি প্রদান করে থাকি। বৃত্তির নাম : পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের ধর্মীয় মেধাবৃত্তি বৃত্তির ধরণ : নগদ অর্থ, ক্রেস্ট এবং শিক্ষা সামগ্রী বৃত্তিপ্রাপ্তদের স্তর : তৃতীয় শ্রেণি থেকে পচ্ঞম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তির পদ্ধতি : বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ কতৃক প্রকাশিত নির্দিষ্ট আবেদন ফরমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন ফরম গ্রহণ এবং জমাদান করতে হয়। তারপর পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন পদ্ধতি : নিরপেক্ষ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত একটি দল কতৃক লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয়। একই দিনে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণ করা হয়। বৃত্তির সংখ্যা : প্রতি বিভাগ থেকে ১ম, ২য় এবং তয় স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ ছাড়াও প্রতি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ৩ জন করে মোট ৯ জনকে বিশেষ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচন করা হয়ে থাকে। গোপনীয়তার নীতি : একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে এবং নেতৃত্বে প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ, সংরক্ষণ এবং পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। তিনি পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের জন্য দায়বব্ধ থাকেন। উদ্দেশ্য : সমাজের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এবং সমাজে শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে একটি শিক্ষিত এবং আত্মনির্ভরশীল প্রজন্ম ও সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখা। বৃত্তির উৎস : যে কেউ যে কারো নামে স্মৃতি বৃত্তি দিয়ে অংশ নিতে পারেন। যে কেউ এককালীন অনুদান দিয়ে পৃষ্ঠপোষক কিংবা দাতা সদস্য হতে পারেন।

শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের অনন্য একটি উদ্যোগ হলো শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচী। আমরা ২০২০ সাল থেকে একটি শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচী চালু করি। এই শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্পের অধীনে প্রতি বছর আমরা অর্ধশত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকি। বৃত্তির নাম : পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের শিক্ষাবৃত্তি বৃত্তির ধরণ : এককালীন নগদ অর্থ বৃত্তিপ্রাপ্তদের স্তর : স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবেদনের পদ্ধতি : বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ কতৃক প্রকাশিত নির্দিষ্ট আবেদন ফরমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন ফরম গ্রহণ এবং জমাদান করতে হয়। মনোনয়ন পদ্ধতি : একটি নিরপেক্ষ এবং অভিজ্ঞ বৃত্তি মনোনয়ন কমিটির নেতৃত্বে স্বচ্ছভাবে এই বৃত্তি মনোনয়ন এবং প্রদান করা হয়। উদ্দেশ্য : সমাজের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এবং সমাজে শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে একটি শিক্ষিত এবং আত্মনির্ভরশীল প্রজন্ম ও সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখা। বৃত্তির উৎস : যে কেউ যে কারো নামে স্মৃতি বৃত্তি দিয়ে অংশ নিতে পারেন। যে কেউ এককালীন অনুদান দিয়ে পৃষ্ঠপোষক কিংবা দাতা সদস্য হতে পারেন।