২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দ
১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

নমো বুদ্ধায়

খুরুশকুল রাখাইন বৌদ্ধ শ্মশ্বান বেদখলমুক্ত করা হয়েছে

শেয়ার করুন
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Telegram
Email
Print

সুরক্ষা ডেস্ক :
কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার খুরুশকুল রাখাইন পল্লী হচ্ছে খুরুশকুলের একমাত্র বৌদ্ধপল্লী। অনেক প্রাচীন জনপদ এটি। ৯নং খুরুশকুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তারা। গ্রামে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ বিহারও আছে। বিহারের নিচেই কিছু দিন আগে সম্মেলন করে আমরা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ (খুরুশকুল রাখাইনপাড়া ইউনিট কমিটি) দিয়েছিলাম। অবশ্য এরআগেও তাদের প্রয়োজনে সেখানে বিভিন্ন সময় গিয়েছিলাম।
এবার গেলাম তাদের একমাত্র শ্মশ্বানকে কেন্দ্র করে।

 

বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ খুরুশকুল রাখাইনপাড়া ইউনিট কমিটির মাধ্যমে গ্রামবাসী জানালো তাদের একমাত্র শ্মশ্বানটি জোরজবর দখল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কোনমতেই ঠেকাতে পারছেন না। কাগজপত্র দেখলাম শ্মশ্বানের নামে ৪০ শতক (এক কানি) জায়গা আছে। শেষ খবর হলো, তারা যেটুকু জায়গা বর্তমান ব্যবহার করতে পারছেন সেখানে গত কিছু দিন আগে স্থানীয় এক ব্যক্তি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঢুকে মৃতদেহ পোড়ানোর বেদীটা ভাংচুর করে নষ্ট করে দেন এবং শ্মশ্বানের চারদিকে জমানো খুটি বসিয়ে দেন। তখন তারা নিরুপায় হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং থানা-পুলিশ করেছিলেন কিন্তু সমাধানটা আসেনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের পরামর্শ পেয়ে বড়জোর তারা থানায় একটা মামলা করেছিলেন। অথচ এর কোন প্রয়োজন ছিলনা। ন্যায়সঙ্গতভাবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক সমস্যার দ্রুত সমাধান করা যেত। কার দোষ কাকে দেবো?

তাদের সবকথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেও আমাদের কিন্তু পুরোটা বিশ্বাস করতে মন সাই দিচ্ছিলো না। কারণ একটি শ্মশ্বান নিয়ে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়! ভুক্তভোগীদের জমি পরিমাপ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলেছিলাম। সেই মতে, গত ১৬ জুলাই দুপুরে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের যাওয়ার কথা শুনে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং মেম্বার ও দ্রুত আমাদের সাথে যোগ দেন। তারাও একবাক্যে স্বীকার করলেন যে এটা গুরুুতর অপরাধ হয়েছে। দাদা, (চেয়ারম্যান) আপনি এলাকার অভিভাবক। আপনারা থাকতে এমন ঘটনা ঘটে কেমনে? এটা এক ঘন্টার কাজ। আজও সমাধান হলো না কেন? প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাইনি। তবে সার্ভেয়ার দিয়ে কাগজপত্র মোতাবেক পুরো জমি পরিমাপ করে স্থায়ী সীমানা খুটি দিয়ে ৪০ শতক জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেয়া পর্যন্ত পুরোটা সময় ধরে (সন্ধ্যাকালীন সময় পর্যন্ত) চেয়ারম্যান মহোদয় আমাদের সাথে সারাক্ষণ ছিলেন। উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অবিলম্বে শ্মশ্বানের পুরো ৪০ শতক জায়গা কাটাতারের ঘেরা দিয়ে ঘিরে নেয়াসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গ্রামবাসীকে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সদর থানায় রুজু হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মুটো ফোনে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন শ্মশ্বানের দিকে কেউ আর চোখ তুলেও তাকাতে পারবেনা। আমরা আছি। আমি আগামীকাল ঘটনাস্থলে যাবো। সদর থানাকেও ধন্যবাদ জানাই।

শ্মশ্বানে গিয়ে দেখি যা শুনেছি তার চেয়েও বেশি কিছু হচ্ছে ওখানে। শ্মশ্বানের ৪০ শতকের জায়গার মধ্যে অন্তত অর্ধেক জায়গা এই ঘটনা ঘটার আগে থেকে ঘেরা দিয়ে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় আরেকটি পক্ষ। এখন যেটুকু অবশিষ্ট ছিলো সেটুকুও জোরজবর দখল করে নিতে চাচ্ছে অপর আরেকটি পক্ষ। কেউ একবারও ভাবলেন না যে এই মানুষগুলো মৃতদেহ সৎকার করবেন কোথায়! যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়াও তো যাবেনা। মরলে সাড়ে তিনহাত জায়গায় যেখানে হয়ে যায় সেখানে আমাদের কিছুই কুলায় না কেন বুঝিনা বাপু।

দেশের এককোণে এই ধরণের ঘটনাগুলো ঘটায়, ঘটাচ্ছে গুটিকয়েক লোভী মানুুষেরা। কিন্তু এটা সাথে সাথে ভাইরাল হলে পরিচিতি পেত অন্যরকম একটা ঘটনা হিসেবে। পারতপক্ষে আমরা সেটা করতে দিইনা। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করি সমস্যার সমাধান যেন দুজন প্রতিবেশীর মধ্যে ঝামেলা হলে যেভাবে সমাধান হয় সেভাবেই করতে। কারণ ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের, ভাবাদর্শের, চিন্তা-চেতনার, রুচির, দৃষ্টিভঙ্গীর, মানসিকতার মানুষদের নিয়েই আমাদের সবাইকে বসবাস করতে হয়। আবার অনেক সময় কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হই। কারণ সমস্যা থাকবে মানি কিন্তু আমাদের সমাধানও দরকার এবং দ্রুত দরকার।

শেয়ার করুন
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Telegram
Email
Print

আপনার মন্তব্য যোগ করুন